গুরুজী শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর আমার অভিজ্ঞতায়৷

আমার অভিজ্ঞতায় গুরুজী শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর ৷
ভারতী গাঙ্গুলী

গুরুজীর সঙ্গে প্রথম দর্শনেই স্পার্ক, যেন বিদ্যুতের ঝিলিক খেলে গেল৷ ওঁনার পদ্মপলাশ নয়ন ভালবাসার অন্তর্ভেদী দৃষ্টি৷ মনে হল কোথায় যেন ওঁনাকে দেখেছি৷ উনি বক্তৃতা দিলেন। সাহেব ভক্ত বাঁশী বাজাতে লাগল। আমার মাথায় তখন একই প্রশ্ন খেলছে, কোথায় দেখেছি ওঁনাকে? কোথায়?

জায়গাটি চব্বিশ নম্বর অশ্বিনী দত্ত রোড, বালীগঞ্জ। কথা সাহিত্যিক শরৎ  চন্দ্রের বাসভবনে। গুরুজী কলকাতায় বাঙালীদের সঙ্গে পরিচিত হতে চেয়েছিলেন, তাই এক ডাক্তারের স্ত্রীর বিশেষ অনুরোধে অনিচ্ছা সত্ত্বেও গিয়েছিলুম। তখন আমি ক্লাব পার্টি নিয়ে ব্যস্ত থাকতুম। কোন সাধক দেখার আগ্রহ আমার ছিলনা সেদিন। --- আমার সারাটা রাত ঘুম হ’ল না, অদ্ভুত অস্থিরতায়।

দুদিন বাদেই কোর্স করলুম ওঁনার কাছে। হোটেল হিন্দুস্থান ইন্টারন্যাশনালে। বেঙ্গালুরু আশ্রমে ছুটে গেলুম কদিন পরই। আত্বীয়স্বজন সবাইকার আপত্তি, সমালোচনা সত্ত্বেও। আশ্রমে পৌঁছেই দারুণ শান্তি। গুরুজীর পিতাজী, মাতাজী, বোন ভানু সবাই আমায় ভালোবাসতেন। দুমাস পর পরই যাতায়াতে গুরুজী বললেন, দু মাস নয়। ছ মাস পর পর এসো। তোম টিচার বান যাও। --১৯৯৪ সালে আমিই প্রথম পশ্চিমবঙ্গের টিচার হলুম। গুরুজীর আদর্শ মাথায় নিয়ে স্নেহ, ভালবাসা, হৃদয় দিয়ে ভালবাসতে লাগলুম আমার আর্ট অব লিভিং-য়ের ছাত্র ছাত্রীদের। গ্রামে, গঞ্জে, শহরে ছুটে ছুটে বেড়ালুম মানুষের ভেতরে মানুষ খুঁজতে। বোঝাতে লাগলুম, ঈশ্বরের দান এই শরীরটাকে সম্মান কর, ক্রিয়া, ধ্যান, ভজনের মাধ্যমে দেহ মনকে সতেজ কর, আমরা শুধু নিজের জন্য আসিনি। গুরুজীর কথায় ‘সেবাকো লিয়ে আয়া হ্যায়।’ গুরুজীর সঙ্গে ভারতবর্ষের নানা জায়গাতেই শুধু নয়, আমেরিকা, কানাডা, জার্মানী, ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি কত জায়গায় ঘুরেছি। ওঁনাকে কখনও মনে হয় আমার পিতার মত, কখনও বন্ধুর মত। উনি বলেছেন ভালবাসার কোন সম্পর্ক খুঁজতে নেই। --২০০০ সালে আমার স্বামী সত্যব্রত গাঙ্গুলীকে দুর্বত্তরা অপহরণ করেছিলো, কিন্তু উনি চোখ বাঁধা অবস্থায় বন্ধ ঘরে গুরুজীর ধ্যানে নিমগ্ন ছিলেন। আমি তখন গুরুজীর সঙ্গেই দিল্লীতে। খবর পেয়েই কান্নাকাটি। --গুরুজী চোখ বন্ধ করে ধ্যানে বসলেন, মিনিট দুয়েক পরেই বললেন, ‘কিডন্যাপ হো গিয়া। তিন চারদিন পিছুমে উ লোক উসকো ছোড় দে গা।’ --গুরুজীর আশীর্বাদে দিন সাতেক বাদে ওঁনাকে দুর্বৃত্তরা হাওড়া স্টেশনে ছেড়ে দিয়ে গেল, কোন রকম মুক্তিপণ না নিয়েই। ভুল লোককে তারা ধরেছিল, বলে গেলো। --আজ গুরুজী আমাদের একান্ত আপনজন, আমাদের অভিভাবক। উনি আমাদের শিখিয়েছেন, উপনিষদের সেই অভীঃমন্ত্র – ভয় হীনতার কথা, মৃত্যু কে ভয় কর না, জরা, ব্যাধিকে ভয় করনা, --এগিয়ে যাও – বৈদিক ঋষি মহীদাস বিশ্ববাসীকে ডাক দিয়ে বলেছিলেন, চরৈবেতি---চরৈবেতি। এগিয়ে যাও---। এগিয়ে যাও---।